Reporter: নিজস্ব সংবাদদাতা | লেখক: Rahul Majumder | Editor: শ্যামশ্রী সাহা ২১ আগস্ট ২০২৪ ১৯ : ১৪Rahul Majumder

সংবাদ সংস্থা মুম্বই: খ্যাতি, বিপুল অর্থ, জনপ্রিয়তা ও বিতর্কের ওপারে অদ্ভুত এক আলো-আঁধারি জায়গা বলিউড। আরব সাগরের তীরে এই টিনসেল টাউনে এমন অনেক কিছুই মাঝে মাঝে ঘটে যায় যা শুনে সাধারণ মানুষের চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। বিশেষ করে ২০০৮ সালের নীরজ গ্রোভার হত্যা কাণ্ড। মুম্বইয়ের হিন্দি ধারাবাহিকে জগতের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক ছিলেন ২৬ বছরের  নীরজ গ্রোভার। তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় দক্ষিণী অভিনেত্রী মারিয়া সুসাইরাজের। আলাপ গড়ায় ভালবাসায়।  এই মারিয়া সুসাইরাজ এবং তাঁর পুরনো প্রেমিক লেফট্যানেন্ট এমিল জেরম ম্যাথিউ-এর হাতেই নৃশংসভাবে খুন হন নীরজ! 

দক্ষিণ ছবির জগতে নাম না করতে পেরে ভাগ্য পরীক্ষা করতে বলিউডে পা রেখেছিলেন মারিয়া। অডিশন দিচ্ছিলেন বিভিন্ন ছবি প্রযোজনা সংস্থায়। এইরকম পর্বে নীরজের সঙ্গে আলাপ হয় মারিয়ার। শুরু হয় বন্ধুত্ব। বিভিন্ন ছবি ও ধারাবাহিক প্রযোজনা সংস্থার অভিনেত্রী খোঁজার পালা কানে আসলেই সেখানে মারিয়াকে পাঠাতে শুরু করেন নীরজ। টুকটাক কাজও পেতে শুরু করেন ওই অভিনেত্রী। কিন্তু কপাল ফেরানোর মতো বড় কিছু হচ্ছিল না। এদিকে সময়ের নিয়মে তাঁর সঙ্গে নীরজের ঘনিষ্ঠতা তখন বেড়ে চলেছে প্রতিদিন। মারিয়া একটিবারের জন্যেও নীরজকে প্রথমে জানানো প্রয়োজন মনে করেননি যে তাঁর একজন প্রেমিক রয়েছেন যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত। কারণ মারিয়ার দু'চোখে তখন স্বপ্ন বলি-অভিনেত্রী হওয়ার এবং সেই স্বপ্ন সফল হওয়ার একমাত্র সিঁড়ির নাম ছিল নীরজ। 

ততদিনে মুম্বইয়ে নীরজের ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করে দিয়েছেন মারিয়া। এরপর মারিয়ার প্রেমিক কোনওভাবে জানতে পারে নীরজের কথা। বাধ্য হয়ে মুম্বইয়ে নতুন ফ্ল্যাট খুঁজে সেখানে চলে যান মারিয়া। ফ্ল্যাট গুছোতে হাজির হয়েছিলেন নীরজও। এদিকে কোনওকিছু সন্দেহ করে মারিয়াকে না জানিয়ে সেই রাতেই কোচি থেকে বিমান ধরে মুম্বইয়ে তাঁর নয়া ফ্ল্যাটে আচমকা এসে হাজির হন তাঁর প্রেমিক।  ঠিকানা তো তাঁর জানাই ছিল। এরপর সেই ফ্ল্যাটের বিছানায় নীরজকে দেখে রাগে ফেটে পড়ে এমিল। নীরজের সঙ্গে শুরু হয় তাঁর জোরদার ঝামেলা। ঝগড়া চরমে উঠলে জ্ঞানশূন্য হয়ে রান্নাঘর থেকে ছুরি নিয়ে নীরজের বুকে গেঁথে দেয় এমিল! তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয় নীরজের। এরপর ওই ছুরি দিয়েই ৩০০ টুকরো করা হয় নীরজের দেহ। আর করে এমিল। তাঁকে সঙ্গ দেয় মারিয়া! শুধু তাই নয়, এরপর নীরজের শরীরের কাটা টুকরোর একপাশে যৌনসঙ্গমেও মত্ত হয় তাঁরা! 

শেষমেশ একাধিক বস্তায় বন্দি করা হয় নীরজের শরীরের কাটা সব অংশ। তারপর গাড়ি করে দূরে গিয়ে পেট্রোলে সেসব বস্তা ভিজিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। নীরজের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ থানায় দায়ের হওয়ার পরপরই সক্রিয় হয় পুলিশ। শুরু হয় তদন্ত। তদন্তে নেমে এসব তথ্য হাতে আসে পুলিশের। মারিয়ার ফ্ল্যাটের দারোয়ান জানান, একাধিক ভারি বস্তা হাতে ফ্ল্যাট থেকে মারিয়া ও এমিলকে সেই রাতে বেরোতে দেখেছিল সে। সন্দেহ আরও দানা বাঁধে। শেষমেশ তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত দু'জনকে। জেরার মুখে উঠে আসে সব তথ্য। দোষী সাবস্ত্য করে রায় দেয় আদালতও। খুনির সহযোগী হিসাবে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে  দণ্ডিত করা হয় মারিয়াকে। এবং খুন ও প্রমাণ লোপাটের দায়ে ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা শোনানো হয় এমিলিকে। 

প্রসঙ্গত, এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে একটি ছবি তৈরি করেছিলেন রাম গোপাল বর্মা।  'নট আ লভ স্টোরি' নামের সেই ছবি বড়পর্দায় মুক্তি পেয়েছিল ২০১১ সালে।